بِسۡمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ
কানযুল ঈমান
০. আল্লাহ্র নামে আরম্ভ, যিনি পরম দয়ালু, করুণাময় (১)
ইরফানুল কুরআন
০. আল্লাহর নামে শুরু, যিনি পরম করুণাময়, সতত অসীম দয়ালু।
اِذَا جَآءَکَ الۡمُنٰفِقُوۡنَ قَالُوۡا نَشۡہَدُ اِنَّکَ لَرَسُوۡلُ اللّٰہِ ۘ وَ اللّٰہُ یَعۡلَمُ اِنَّکَ لَرَسُوۡلُہٗ ؕ وَ اللّٰہُ یَشۡہَدُ اِنَّ الۡمُنٰفِقِیۡنَ لَکٰذِبُوۡنَ ۚ﴿۱﴾
কানযুল ঈমান
১. যখন মুনাফিকরা আপনার সম্মুখে হাযির হয় তখন বলে, ‘আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হুযূর নিশ্চয় নিশ্চয় আল্লাহ্র রসূল এবং আল্লাহ্ জানেন যে, আপনি তাঁর রসূল। আর আল্লাহ্ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, মুনাফ্বিকগণ অবশ্যই মিথ্যুক।
ইরফানুল কুরআন
১. (হে সম্মানিত হাবীব!) যখন মুনাফেকেরা আপনার নিকট আসে তখন তারা বলে, ‘আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি নিশ্চয়ই আল্লাহ্র রাসূল’। আর আল্লাহ্ জানেন যে, অবশ্যই আপনি তাঁর রাসূল এবং আল্লাহ্ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, অবশ্যই মুনাফেকেরা মিথ্যাবাদী।
اِتَّخَذُوۡۤا اَیۡمَانَہُمۡ جُنَّۃً فَصَدُّوۡا عَنۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ ؕ اِنَّہُمۡ سَآءَ مَا کَانُوۡا یَعۡمَلُوۡنَ ﴿۲﴾
কানযুল ঈমান
২. এবং তারা তাদের শপথগুলোকে ঢাল স্থির করে নিয়েছে অতঃপর আল্লাহ্র পথে বাধা দিয়েছে। নিশ্চয় তারা অত্যন্ত মন্দ কাজ করে।
ইরফানুল কুরআন
২. তারা নিজেদের শপথসমূহকে ঢালরূপে ব্যবহার করে, অতঃপর তারা (মানুষকে) আল্লাহ্র পথে বাধা দেয়। নিশ্চয়ই এ খুবই মন্দ (কাজ), যা তারা করছে।
ذٰلِکَ بِاَنَّہُمۡ اٰمَنُوۡا ثُمَّ کَفَرُوۡا فَطُبِعَ عَلٰی قُلُوۡبِہِمۡ فَہُمۡ لَا یَفۡقَہُوۡنَ ﴿۳﴾
কানযুল ঈমান
৩. এটা এ জন্য যে, তারা মুখে ঈমান এনেছে, অতঃপর অন্তরের দিক দিয়ে কাফির হয়েছে; ফলে তাদের অন্তরগুলোতে মোহর করে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং এখন তারা কিছুই বুঝে না।
ইরফানুল কুরআন
৩. তা এ কারণে যে, তারা (মুখে) ঈমান এনেছে, অথচ (অন্তরে) কাফের রয়ে গিয়েছে। ফলে তাদের অন্তর মোহরাঙ্কিত করে দেয়া হয়েছে, কাজেই তারা (কিছুই) বুঝে না।
وَ اِذَا رَاَیۡتَہُمۡ تُعۡجِبُکَ اَجۡسَامُہُمۡ ؕ وَ اِنۡ یَّقُوۡلُوۡا تَسۡمَعۡ لِقَوۡلِہِمۡ ؕ کَاَنَّہُمۡ خُشُبٌ مُّسَنَّدَۃٌ ؕ یَحۡسَبُوۡنَ کُلَّ صَیۡحَۃٍ عَلَیۡہِمۡ ؕ ہُمُ الۡعَدُوُّ فَاحۡذَرۡہُمۡ ؕ قٰتَلَہُمُ اللّٰہُ ۫ اَنّٰی یُؤۡفَکُوۡنَ ﴿۴﴾
কানযুল ঈমান
৪. এবং যখন তুমি তাদেরকে দেখো, তাদের শরীর তোমার ভালো মনে হবে এবং যদি তারা কথা বলে, তবে তাদের কথা মনোযোগ সহকারে শোনো। (তখন মনে হবে) যেন তারা প্রাচীরে ঠেকানো কতগুলো কাঠের স্তম্ভ। তারা প্রত্যেক উচ্চবাচ্যকে নিজেদের উপর টেনে নেয়। তারা শত্রু। সুতরাং তাদের থেকে বাচতে থাকো। আল্লাহ্ তাদেরকে বিনাশ করুন! ওরা উল্টো দিকে কোথায় যাচ্ছে।
ইরফানুল কুরআন
৪. (হে বান্দা!) যখন তুমি তাদেরকে দেখো, তখন তাদের দেহ অবয়ব তোমার কাছে প্রীতিকর মনে হয়। আর যদি তারা কথা বলে, তবে তুমি তাদের কথাবার্তা সাগ্রহে শ্রবণ করো (অর্থাৎ তোমার কাছে তাদেরকে বিচক্ষণ মনে হয়, কিন্তু প্রকৃত বিষয় এই যে,) তারা যেন প্রাচীর ঠেকানো কাঠের স্তম্ভ; তারা যে কোনো শোরগোলকে মনে করে নিজেদের বিরুদ্ধে (বিপদ-আপদ)। এরা (তোমাদের) দুশমন, সুতরাং তাদের ব্যাপারে সতর্ক হও। আল্লাহ্ তাদেরকে ধ্বংস করুন! তারা কোথায় বিভ্রান্ত ঘুরে বেড়াচ্ছে?
وَ اِذَا قِیۡلَ لَہُمۡ تَعَالَوۡا یَسۡتَغۡفِرۡ لَکُمۡ رَسُوۡلُ اللّٰہِ لَوَّوۡا رُءُوۡسَہُمۡ وَ رَاَیۡتَہُمۡ یَصُدُّوۡنَ وَ ہُمۡ مُّسۡتَکۡبِرُوۡنَ ﴿۵﴾
কানযুল ঈমান
৫. এবং যখন তাদেরকে বলা হয়, ‘এসো! আল্লাহ্র রসূল তোমাদের ক্ষমার জন্য প্রার্থনা করবেন’। তখন নিজেদের মাথা ঘুরিয়ে নেয় এবং আপনি তাদেরকে দেখবেন যে, তারা অহঙ্কার করে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
ইরফানুল কুরআন
৫. আর যখন তাদেরকে বলা হয়, ‘এসো, আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসাল্লাম) তোমাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন’, তখন এরা (অহংকারবশত) নিজেদের মাথা ঘুরিয়ে নেয় এবং আপনি তাদেরকে দেখেন যে, তারা দম্ভভরে (আপনার উপস্থিতি থেকে) পলায়ন করে।*
* এ আয়াত (মুনাফেকদের সর্দার) আব্দুল্লাহ্ ইবনে উবাইর ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। যখন তাকে নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসাল্লামের খেদমতে ক্ষমা প্রার্থনার জন্যে উপস্থিত হওয়ার কথা বলা হলো, তখন সে হেঁচকা টানে মাথা ঘুরিয়ে বলতে লাগলো, ‘আমি যাবো না, আমি তো ঈমানও আনয়ন করেছি, তার কথার উপর যাকাতও দিয়ে দিয়েছি। আর বাকী রইলো কেবল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসাল্লামকে সেজদা করা।’ (তাবারী, কাশ্শাফ, নাসাফী, বাগাভী, খাযিন।)
سَوَآءٌ عَلَیۡہِمۡ اَسۡتَغۡفَرۡتَ لَہُمۡ اَمۡ لَمۡ تَسۡتَغۡفِرۡ لَہُمۡ ؕ لَنۡ یَّغۡفِرَ اللّٰہُ لَہُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰہَ لَا یَہۡدِی الۡقَوۡمَ الۡفٰسِقِیۡنَ ﴿۶﴾
কানযুল ঈমান
৬. তাদের জন্য এক সমান- আপনি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন অথবা নাই করুন, আল্লাহ্ তাদেরকে ক্ষমা করবেন না। নিশ্চয় আল্লাহ্ ফাসিক্বদেরকে সৎপথ প্রদান করেন না।
ইরফানুল কুরআন
৬. আপনি তাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করুন অথবা না করুন এদের জন্যে উভয়ই সমান, আল্লাহ্ তাদেরকে কখনো ক্ষমা করবেন না। (কেননা তারা আপনার প্রতি তিরস্কারকারী, আপনার প্রতি বিমুখ এবং অহঙ্কারকারী দল।) নিশ্চয়ই আল্লাহ্ নাফরমান সম্প্রদায়কে পথপ্রদর্শন করেন না।
ہُمُ الَّذِیۡنَ یَقُوۡلُوۡنَ لَا تُنۡفِقُوۡا عَلٰی مَنۡ عِنۡدَ رَسُوۡلِ اللّٰہِ حَتّٰی یَنۡفَضُّوۡا ؕ وَ لِلّٰہِ خَزَآئِنُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ وَ لٰکِنَّ الۡمُنٰفِقِیۡنَ لَا یَفۡقَہُوۡنَ ﴿۷﴾
কানযুল ঈমান
৭. তারাই, যারা বলে, ‘তাদের জন্য ব্যয় করো না, যারা রসূলের নিকট রয়েছে, যতক্ষণ না, তারা পেরেশান হয়ে যায়’। এবং আল্লাহ্রই আস্মানসমূহ ও যমীনের ধন-ভাণ্ডারসমূহ; কিন্তু মুনাফিক্বদের বোধশক্তি নেই।
ইরফানুল কুরআন
৭. (হে সম্মানিত হাবীব!) তারাই সেসব লোক যারা (আপনার প্রতি ক্রোধ ও শত্রুতাবশত বলে বেড়ায়, ‘তোমরা আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসাল্লাম)-এঁর (অভাবী) সহচরদের জন্যে ব্যয় করো না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা (তাঁকে ছেড়ে) বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।’ অথচ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সমস্ত ধনভান্ডার আল্লাহ্রই, কিন্তু মুনাফেকেরা তা বুঝে না।
یَقُوۡلُوۡنَ لَئِنۡ رَّجَعۡنَاۤ اِلَی الۡمَدِیۡنَۃِ لَیُخۡرِجَنَّ الۡاَعَزُّ مِنۡہَا الۡاَذَلَّ ؕ وَ لِلّٰہِ الۡعِزَّۃُ وَ لِرَسُوۡلِہٖ وَ لِلۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَ لٰکِنَّ الۡمُنٰفِقِیۡنَ لَا یَعۡلَمُوۡنَ ﴿۸﴾
কানযুল ঈমান
৮. তারা বলে, ‘আমরা মদীনায় প্রত্যাবর্তন করলে অবশ্য যে বড় সম্মানিত সে সেখান থেকে তাকেই বের করে দেবে, যে অত্যন্ত লাঞ্ছিত। আর সম্মান তো আল্লাহ্, তাঁর রসূল ও মু’মিনদের জন্যই; কিন্তু মুনাফিক্বদের নিকট খবর নেই।
ইরফানুল কুরআন
৮. তারাই বলে, ‘আমরা যদি (এখন) মদীনায় প্রত্যাবর্তন করি তবে (আমরা) সম্ভ্রান্তরা সেখান থেকে অসম্ভ্রান্তদেরকে (অর্থাৎ মুসলমানদেরকে) বের করে দেবো’। অথচ সম্মান তো কেবল আল্লাহ্, তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসাল্লাম) এবং মুমিনগণের জন্যে। কিন্তু মুনাফেকেরা (এ প্রকৃত অবস্থা) জানে না।
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تُلۡہِکُمۡ اَمۡوَالُکُمۡ وَ لَاۤ اَوۡلَادُکُمۡ عَنۡ ذِکۡرِ اللّٰہِ ۚ وَ مَنۡ یَّفۡعَلۡ ذٰلِکَ فَاُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡخٰسِرُوۡنَ ﴿۹﴾
কানযুল ঈমান
৯. হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ, না তোমাদের সন্তান-সন্ততি কোন কিছুই যেন তোমাদেরকে আল্লাহ্র স্মরণ থেকে উদাসীন না করে; এবং যে কেউ তেমন করে, তবে ওই সমস্ত লোক ক্ষতির মধ্যে রয়েছে।
ইরফানুল কুরআন
৯. হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ ও তোমাদের সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে (কখনো) আল্লাহ্র স্মরণে উদাসীন না করে। আর যারা এমন করবে তারাই হবে ক্ষতিগ্রস্ত।
وَ اَنۡفِقُوۡا مِنۡ مَّا رَزَقۡنٰکُمۡ مِّنۡ قَبۡلِ اَنۡ یَّاۡتِیَ اَحَدَکُمُ الۡمَوۡتُ فَیَقُوۡلَ رَبِّ لَوۡ لَاۤ اَخَّرۡتَنِیۡۤ اِلٰۤی اَجَلٍ قَرِیۡبٍ ۙ فَاَصَّدَّقَ وَ اَکُنۡ مِّنَ الصّٰلِحِیۡنَ ﴿۱۰﴾
কানযুল ঈমান
১০. এবং আমার প্রদত্ত (রিযক্ব) থেকে কিছু আমার পথে ব্যয় করো এর পূর্বে যে, তোমাদের মধ্যে কারো নিকট মৃত্যু এসে পড়বে। অতঃপর বলতে থাকবে, ‘হে আমার রব! তুমি আমাকে কিছু সময়ের জন্য কেন অবকাশ দিলে না? যাতে আমি দান-সাদক্বাহ করতাম এবং সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত হতাম!
ইরফানুল কুরআন
১০. আর তোমাদের কারো মৃত্যু আসার পূর্বেই তোমাদেরকে যে রিযক দিয়েছি তা থেকে (আল্লাহ্র পথে) ব্যয় করো। অন্যথায় বলবে, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে কেন আরো কিছুকাল অবকাশ দিলে না? তাহলে আমি সাদকা ও দান করতাম এবং নেক্কারদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।’
وَ لَنۡ یُّؤَخِّرَ اللّٰہُ نَفۡسًا اِذَا جَآءَ اَجَلُہَا ؕ وَ اللّٰہُ خَبِیۡرٌۢ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ ﴿۱۱﴾
কানযুল ঈমান
১১. এবং কখনো আল্লাহ্ কোন প্রাণকে অবকাশ দেবেন না যখন তাঁর প্রতিশ্রুতি (নির্ধারিত সময়) এসে পড়বে এবং তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে আল্লাহ্ জ্ঞাত।
ইরফানুল কুরআন
১১. আর আল্লাহ্ কখনো কাউকে অবকাশ দেন না, যখন তার নির্ধারিত (মৃত্যুর) সময় উপস্থিত হয়। আল্লাহ্ সেসব কর্মকান্ড সম্পর্কে খবর রাখেন, তোমরা যা করছো।